বাংলাদেশের মা ও শিশুমৃত্যুর পরিস্থিতি (পাঠ ৪)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বাংলাদেশের জনসংখ্যা পরিচিতি | - | NCTB BOOK
67
67

সাধারণভাবে বলা যায় সন্তান প্রসবের পূর্বে, প্রসবকালীন এবং প্রসব পরবর্তী সময়ে শারীরিক কিংবা অন্যান্য কারণে মায়েরা মৃত্যুবরণ করলে তাকে মাতৃমৃত্যু বলা হয়। অন্যদিকে জন্মের পর এক বছর বয়সের মধ্যে শিশুর মৃত্যু হলে তাকে শিশুমৃত্যু বলা হয়। শিশু মৃত্যুহার হলো প্রতি বছরে জীবিত জন্মগ্রহণকারী প্রতি হাজারে শিশুমৃত্যুর সংখ্যা।

common.content_added_and_updated_by

বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুর পরিস্থিতি (৪.১)

59
59

বাংলাদেশে ১৯৮০ সালে মাতৃমৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৬৫০ জন। ১৯৯০ সালে এ সংখ্যা ৫৭৪ জন, ২০০১ সালে ৩২২জন এবং ২০১০ সালে মাতৃমৃত্যুর সংখ্যা কমে ১৯৪ জন হয়। বিশ্বব্যাংক প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী ২০১৬ সালে মাতৃমৃত্যুর হার ছিল ১৭৬জন (প্রতি লক্ষে)। ২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এটা প্রতি লক্ষে ১৫৬জন।

মাতৃমৃত্যুর কারণ

আমাদের দেশে বাল্যবিবাহের কারণে মেয়েরা অল্পবয়সে গর্ভধারণ করে। গর্ভকালে, অবহেলা, অজ্ঞতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি প্রভৃতি কারণে মায়েরা প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায় না। ফলে তারা মাতৃত্বকালীন নানা জটিলতায় ভোগে এবং মৃত্যুবরণ করে। তাছাড়া মাতৃমৃত্যুর আরও অনেক কারণ রয়েছে। যেমন-নিম্ন জীবনযাত্রা, বিশুদ্ধ পানির অভাব ও দুর্বল সেনিটেশন ব্যবস্থা, নারী শিক্ষার অভাব, চিকিৎসার অভাব, ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভপাত, প্রসবকালীন উচ্চ রক্তচাপ, একলেমশিয়া প্রভৃতি।

মাতৃমৃত্যুর প্রভাব

বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুর কারণে শিশু প্রয়োজনীয় পুষ্টি হতে বঞ্চিত হয়। ফলে শিশু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে শিশু মৃত্যুবরণ করে। মাতৃহারা শিশুর সুষ্ঠু সামাজিকীকরণে সমস্যা হয়। মাতৃমৃত্যুর কারণে সদ্য জন্মগ্রহণকারী শিশুর জন্য মায়ের দুধের বিকল্প দুধের প্রয়োজন হয়। এতে অনেক ক্ষেত্রেই শিশু পেটের পীড়া কিংবা অন্য সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে। ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হয়। দরিদ্র পরিবারের জন্য এই অর্থ খরচ একটি বাড়তি চাপ। অনেক ক্ষেত্রে মাতৃমৃত্যু পারিবারিক বিশৃঙ্খলতার অন্যতম কারণ। শিশুর প্রতি পিতার অধিকতর যত্নশীল ভূমিকা মাতৃমৃত্যুর প্রভাব লাঘবে সহায়ক হতে পারে।

common.content_added_by

বাংলাদেশে শিশুমৃত্যুর পরিস্থিতি (৪.২)

82
82

বাংলাদেশে শিশুমৃত্যু হ্রাসে উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করেছে। ২০০৮ সালে ইউনিসেফ প্রকাশিত এক রিপোর্টে দেখা যায়, ১৯৯০ সালে এদেশে শিশুমৃত্যুর হার ছিল প্রতি হাজারে ১৪৯জন, ২০০৬ সালে এ সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৬৯জনে। ২০০৮ সালে শিশুমৃত্যুর হার আরো হ্রাস পেয়ে দাঁড়ায় ৫২জনে। ২০১৬ সালে শিশুমৃত্যু হার আরো হ্রাস পেয়ে হয় ২৮জন। ২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি ১০০০ জীবন্ত জন্মে শিশুমৃত্যু ঘটে ২০জন। সুতরাং বাংলাদেশে শিশুমৃত্যুর হার দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। শিশুমৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেলেও উন্নত দেশসমূহের তুলনায় এ হার অনেক বেশি।

শিশুমৃত্যুর কারণ

বাংলাদেশের অনেক মানুষ এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। ফলে মা ও শিশু সঠিক স্বাস্থ্য সেবা, পরিচর্যা পুষ্টিকর খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মূলত দারিদ্র্যের কারণেই শিশুদের একটা অংশ মৃত্যুবরণ করে। তাছাড়া এদেশে এখনও বাল্যবিবাহের প্রচলন রয়েছে। ফলে অল্প বয়সে গর্ভধারণ করায় সন্তান দুর্বল ও পুষ্টিহীন হয়। অনেক সময় শারীরিক জটিলতায় এসব শিশু মৃত্যুবরণ করে। এখনও এদেশে গ্রাম্য প্রশিক্ষণহীন ধাত্রীর হাতে সন্তান প্রসব হয় যা শিশুমৃত্যুর হার বাড়িয়ে দেয়। আবার মায়ের অপুষ্টি ও অসুস্থতার কারণে অনেক সময় শিশুরা অপুষ্টিতে ভোগে। অপুষ্টির কারণে বিভিন্ন রোগ হয়। ফলে অনেক শিশু মৃত্যুবরণ করে।

আমাদের দেশে হাম, পোলিও, যক্ষ্মা, ধনুষ্টংকার, ডিপথেরিয়া ও হুপিং কাশি প্রভৃতি রোগে শিশুমৃত্যুর হার কমলেও এখনও এর প্রভাব কোনো কোনো অঞ্চলে রয়েছে। এর কারণেও শিশুমৃত্যুর হার বাড়ছে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবার অভাব, গ্রাম ও শহরের চিকিৎসা সুযোগ সুবিধার তারতম্যের কারণে এদেশে গ্রামীণ এলাকায় শিশুমৃত্যুর হার বেশি। তাছাড়া অশিক্ষা, অজ্ঞতা, কুসংস্কার এবং অবহেলার কারণেও শিশু মৃত্যু ঘটে থাকে। এদেশের ঘনঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেও শিশুর মৃত্যু ঘটে। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল এ ঘূর্ণিঝড়ে ও জলোচ্ছ্বাসে প্রায় ১,৩৮,০০০ মানুষ মারা গিয়েছিল যার শতকরা ৫০ ভাগই ছিল শিশু।

শিশুমৃত্যুর প্রভাব

পরিবারে শিশুমৃত্যুর ঘটনা খুবই দুঃখজনক। পরিবারে শিশুমৃত্যুর ঘটনার সাথে আমরা কেউ কেউ পরিচিত। একটি পরিবারে যখন একটি শিশু মারা যায় তখন ঐ পরিবার অনেকটা অগোছালো হয়ে যায়। এই পারিবারিক শোক সামলানো কষ্টকর হয়ে পড়ে।

শিশুমৃত্যুর উচ্চ হার দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নেও বাধা সৃষ্টি করে। শিশুর মৃত্যুজনিত কারণে পরিবারের সদস্যরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকে। যা পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তির স্বাভাবিক কাজ কর্মে বাঁধার সৃষ্টি করে। ফলে পরিবারটিও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই আমাদের শিশুমৃত্যু বিষয়ে সচেতন হতে হবে। শিশুমৃত্যু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।

কাজ-১: তোমার এলাকায় মাতৃমৃত্যুর কারণ চিহ্নিত কর।
কাজ-২: তোমার এলাকায় শিশুমৃত্যুর কারণ চিহ্নিত কর।
common.content_added_and_updated_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion